ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

খুটাখালী কিশলয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ শিক্ষিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
চকরিয়া উপেজলার খুটাখালী কিশলয় আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে নুরুল কবির নামক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপর শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানী, হুমকি ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ মার্চ স্কুল ক্যাম্পাসেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। শিক্ষক নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও ভিকটিম ফাতেমা জান্নাত। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্রপরিষদ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী প্রাক্তন ছাত্রপরিষদের।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ৫ মার্চ স্কুলের ক্লাস শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে শিক্ষক মিলনায়তনে প্রস্তুতিমূলক সভায় যোগদান করেন ফাতেমা জান্নাত। সভা শেষে বাড়ি ফেরার জন্য অফিস থেকে বের হওয়ার সময় শিক্ষক নুরুল কবির তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, বিভিন্ন যৌন হয়রানীমূলক শব্দ ব্যবহার করেন। তার এমন কুরুচিপূর্ণ আচরণ প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা প্রত্যক্ষ করেছেন।
অভিযোগ আনা হয়, সবার সামনে শিক্ষিকা ফাতেমাকে হোটেলের ‘দেহ ব্যবসায়ী’ বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষক নুরুল কবির। যা হাইকোর্টের যৌন হয়রানি বিষয়ক নির্দেশনা-২০০৯ মতে পুরুষ সহকর্মী কর্তৃক নারী সহকর্মীর প্রতি এক ধরনের যৌন হয়রানি।
ফাতেমা জান্নাত দুঃখ করে জানান, স্কুলে প্রকাশ্যে একজন শিক্ষকের এমন নির্লজ্জ আচরণে তিনি বিস্মিত ও হতবাক হন। যৌন হয়রানীমূলক আচরণ, অশালীন ভাষায় গালমন্দ ও হুমকিতে চরম অপমানবোধ করছেন। সেই সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন শিক্ষিকা ফাতেমা জান্নাত। এ ঘটনার সঠিক প্রতিকার চেয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষাঙ্গনের মতো পবিত্র পরিবেশে এমন ঘৃণ্য, ন্যাক্কারজনক ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে প্রতিক্রিয়া স্থানীয় লোকজনের।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেন শিক্ষক নুরুল কবির। তিনি শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিতের ঘটনাটি সত্য নয় বলে দাবী করেছেন।
ঘটনার প্রসঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়।
তিনি জানান, শিক্ষিকা ফাতেমা জান্নাতকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করার বিষয়ে উভয়জনকে ডেকে বসেন। সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষিকা ফাতেমা মানতে রাজি হন নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে ফাতেমা বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, দরজা বন্ধ করে শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে বিচার কেমনে হয়? যারা সাক্ষি কিংবা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাদের কাউকে বৈঠকে ডাকেন নি।
তার দুঃখ, প্রকাশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ, হুমকির বিচার চুপে কেমনে করতে চেয়েছেন স্কুল কমিটির সভাপতি? এটি অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচিয়ে দেয়ার অপচেষ্টার অংশ বলেও মন্তব্য করেন ভিকটিম ফাতেমা জান্নাত। তিনি ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি দাবী করেন।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শিবলী নোমান জানান, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, একজন শিক্ষক অপর শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানীমূলক আচরণ করা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগটি স্পর্শকাতর হওয়ায় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলেও জানান ইউএনও।

পাঠকের মতামত: